প্রকাশিত : ১৩ মে, ২০১৯ ১৮:২১

বগুড়ায় প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন

বগুড়া সারিয়াকান্দিতে নিয়ম বহির্ভুতভাবে গুচ্ছ গ্রাম স্থাপনে অপচেষ্টার অভিযোগ
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বগুড়ায় প্রধানমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন

বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের শাহানবান্দা গ্রামে স্থানীয় গ্রামবাসীর ব্যক্তিমালিকাধীন (সি.এস ও এম.আর.আর খতিয়ান মূলে) উর্বর চাষযোগ্য    জমিকে খাস জমি হিসেবে নিয়ম বহির্ভুতভাবে একই সাথে দুটি গুচ্ছ গ্রাম স্থাপনের অপচেষ্টার অভিযোগ।


আজ সোমবার সকালে বগুড়া প্রেস কাব মিলনায়তনে গুচ্ছগ্রাম স্থাপনের নামে গরীব চাষীদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং প্রকল্পটির নানা দুর্নীতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন অনুুষ্ঠিত হয়েছে। শাহানবান্দা গ্রামবাসীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন আমিরুল ইসলাম।

গ্রামের প্রায় ১৫ জন ভুক্তভোগীকে সাথে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আমিরুল ইসলাম বলেন, গুচ্ছগ্রাম দুইটির জন্য যে সিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে খাস জমি নয়। প্রত্যেকটি জমিরই সি.এস খতিয়ান এবং এম.আর.আর খতিয়ান মূলে প্রকৃত জমির মালিক ও ওয়ারিশগণ রয়েছেন।

১৯৮৪ ও ১৯৮৬ ইং সালের ভয়াবহ বন্যায় যমুনা নদীর পশ্চিম তীরের বাঁধ ভেঙ্গে বন্যায় উক্ত মৌজার জমিগুলো গভীর গর্ত ও খাল খন্দ সৃষ্টি হয়ে জলাশয়ে পরিণত হয়। সেসময় ১৯৮৮ সালে ভূমি জরিপের সময় বর্ণিত সম্পত্তিগুলো জলাশয় শ্রেণীর সম্পত্তি ধরে হাল ৯৫৫ নম্বর দাগে ১ নম্বর খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত করেন। কিন্তু পরবর্তীতে পলিমাটি দিয়ে ৫/৬ বছরের মধ্যে জমিগুলো সাবেক অবস্থায় ফিরে আসে এবং গ্রামবাসী নিজেদের কাছে থাকা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের আলোকে মাপঝোঁকের মাধ্যমে জমিগুলোতে চাষাবাদ শুরু করেন।

নিজ নিজ কাগজপত্র প্রদর্শন অনুযায়ী তারা বিভিন্ন সময়ে পুন:জরিপের মাধ্যমে উপজেলায় কর্মরত সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাগুণের কাছে ম্যাপ প্রস্তুতের আবেদন জানান এবং তারা তা ঠিক করে দেওয়ারও আশ্বাস দেওয়া হয় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। 

তিনি আরও বলেন, যেহেতু ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ প্রজাস্বত্ব আইন ধারা ৮৬ এবং উপধারা ০২ অনুসারে ৩০ বছরের মধ্যে জমি জেগে উঠলে উক্ত জমির মালিকগণ বা ওয়ারিশগণ তা আবার ফিরে পাবে।

আবার সাবধারা ০৪ অনুসারে জমি উঠামাত্র সরকার নতুন ম্যাপ প্রণয়ন করবেন। আইনটি আবার ১৯৯৪ সালে সংশোধিত হয়। যেহেতু বর্ণিত জমিগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয় নাই বরং ৭/৮ বছর জলাশয় সম্পত্তি ছিল তাই আইন অনুযায়ী জমিগুলো খাস হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি উক্ত জমিগুলোতে মরিচ, গম ইত্যাদি ফসল থাকা অবস্থায় হাটশেরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেখানে গুচ্ছগ্রাম স্থাপনের জন্য মাপঝোক শুরু করেন।

নিজেদের মালিকাধীন জমিগুলোকে রক্ষার জন্য গ্রামবাসী স্থানীয় সংসদ সদস্যকেও বিষয়টি অবহিত করেন। পরবর্তীতে গত ২৩ জানুয়ারী সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকটও গ্রামবাসীর পক্ষে লিখিত আবেদন প্রদান করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প দুটির কাজ খুব দ্রুত সময়ের মাঝে বন্ধ করা হয়েছিল ফলে গ্রামের চাষীগণ যথাক্রমে চাষাবাদ শুরু করেছিল সব সমাধান হয়ে যাবে এই মর্মে।


কিন্তু উক্ত জমিগুলোতে হঠাৎ গত ২৪ এপ্রিল পাকতে শুরু করা ধান ও পাট ক্ষেতের মধ্যে বেশ কয়েকটি ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করে জমিতে ফেলা শুরু হয়। গ্রামবাসীরা আবার সঠিক সমাধানের আশায় গত ২৯ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।

এত কিছুর পরেও ব্যক্তি মালিকাধীন জমিগুলোকে খাস জমি দেখিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে লাগলে অবশেষে গত ২ মে বগুড়ার ১ম যুগ্ম আদালতে দুটি সি.এস খতিয়ান মূলে দুটি মোকদ্দমা দায়ের করা হয় যার নম্বর ১১৩/২০১৯ এবং ১১৪/২০১৯।

কোর্টে মামলা করার বিষয়ে গ্রামবাসীরা আরও বলেন গত ৭ মে বিজ্ঞ আদালত জমির যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই পূর্বক বিবাদীদের শোকজ করেন এবং ১০ দিনের মধ্যে আদালতে জবাব দিতে বলেন। বিধি অনুযায়ী আদালতের শোকজ প্রাপ্ত হলে তৎক্ষণাৎ কাজটি বন্ধ করা উচিত কিন্তু হয়েছে তার উল্টো স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এর নেতৃত্বে উক্ত গুচ্ছগ্রামের কাজ আরও জোরেসোরে আরম্ভ হয়েছে যাতে গ্রামবাসীরা আরও ভীত হয়ে পরেছেন।

উল্লেখ্য প্রকল্প দুটির মাটি ভরাট কাবিখা কর্মসূচীর আওতায় সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে আশেপাশের জমির ভূগর্ভস্থ বালু দ্বারা জমি ভরাট করা হচ্ছে।

যাতে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে সকল জমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। যেহেতু জমিগুলোর মালিক অথবা ওয়ারিশগণ জীবিত এবং তাদের কাছে নিজ নিজ জমির সি.এস ও এম.আর.আর রয়েছে সাথে উক্ত জমিগুলো চাষাবাদের জন্য খুবই উর্বর জমি তাই জমিগুলোতে চাষাবাদ চালিয়ে যাওয়া এবং গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের মাধ্যমে এই গ্রামের গরীব চাষীদের জীবিকা চরম হুমকির মুখে পতিত হবে বলে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সহযোগিতা কামনা করেছেন।

 

উপরে