প্রকাশিত : ৮ জুন, ২০২০ ২১:০২

সৈয়দপুরে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীর লাশ নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ,জুয়াড়ির বাড়ি ভাঙচুর

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি
সৈয়দপুরে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীর লাশ নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ,জুয়াড়ির বাড়ি ভাঙচুর

নীলফামারীর সৈয়পুরে জুয়াড়িদের ছুরিকাঘাতে আহত এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ (সোমবার) সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর নাম আলমগীর (৩০)। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী যুবক আলমগীর হত্যাকারী জুয়াড়িদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বরে (পাঁচমাথা মোড়) বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। এছাড়াও বিক্ষুদ্ধ লোকজনা ঘটনার জড়িত জুয়াড়ি বাবু ওরফে বাবুয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে। পরে  খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, শহরের হাতিখানা ও হাতিখানা ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা বাবু ওরফে বাবুয়া (২৬), মো. মনু (২৮), আদিল (৩০), নাসিম (২৬), মো. সামসাদ  (২৫), মো. ইব্রাহিম (২২), চঞ্চল (২১) ও মাহবুব (২২)। উল্লিখিত যুবকরা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রায় দিন শহরের রেলওয়ে লাইন এলাকায় মাদকসেবন ও জুয়া খেলতো। আর একই এলাকার মৃত. আইয়ুব আলীর ছেলে আলমগীর (৩০) তাদের এ সব অসামাজিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতো। ঘটনার দিন গত ৩১ মে উল্লিখিত যুবকরা প্রতিদিনের মতো রেলওয়ে লাইনের ওপর বসে মুঠোফোনে টাকার দিয়ে লুডু খেলছিল। আর এ সময়  তাদের  মুঠোফোনে লুডু খেলতে বাঁধা দেন হরেক মাল বিক্রেতা আলমগীর (৩০)। এ সময় জুয়াড়িরা তাঁর ওপর চড়াও হয়ে মারপিট করে এবং প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করে। পরবর্তীতে বিকেল আনুমানিক ৫টা ৫৫ মিনিটের সময় হরেক মাল বিক্রেতা আলমগীর তাঁর বাড়ি থেকে বের হয়ে রেলওয়ে লাইনের ওপর দিয়ে সৈয়দপুর শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় শহরের হাতিখানা আজিম উদ্দিন সড়কের বিসমিল্লাহ ফল ভান্ডারের বিপরীতে পশ্চিম পাশে রেলওয়ে লাইনের ধরে ওঁৎ পেতে থাকা জুয়াড়িরা আলমগীরের পথরোধ করে। এ সময় সংঘবদ্ধ জুযাড়ির দলসহ আরো ৩/৪জন লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। সেখানে হামলাকারী জুয়াড়িরা আলমগীরকে এলোপাাতাড়ি মারপিট করাসহ তাঁর পেটে চাকু মেরে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়।  এ সময় আলমগীরের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন দ্রুত ছুঁটে আসেন এবং তারা  মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেই থেকে মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত আলমগীর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।এ ঘটনায় আহত আলমগীরের মামা  মো. আব্দুল মালেক বাদী হয়ে আটজনকে আসামী করে গত ৩ জুন সৈয়দপুর রেলওয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে, আজ সোমবার সকালে  রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলমগীরে মারা যান। জুয়াড়িদের ছুরিকাঘাতে আহত আলমগীরের মৃত্যুর খবর অল্প সময়ে গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। জুয়ার খেলায় বাঁধা দেয়ায় কারণে জুয়াড়িদের ছুরিকাঘাতে আলমগীরের মৃত্যুর ঘটনায় হাতিখানা এলাকার লোকজন বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন।  বিক্ষুদ্ধ লোকজন শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বরে (পাঁচমাথা মোড়) এলাকায় অবস্থান নেয়।  পরে বিকেলে নিহত আলমগীরে লাশ সেখানে এসে পৌঁছে। এ সময় বিক্ষুদ্ধ লোকজন সেখানে লাশ রেখে প্রায় এক ঘন্টা ধরে বিক্ষোভ সামবেশ করে। এ সময় তারা আলমগীর হত্যাকারিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান। সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন বক্তব্য নীলফামারী জেলা মাইক্রোবাস জিপ কার পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া, সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগ অর্থ সম্পাদক মো. আইয়ুব আলী, নিহত আলমগীরের বড়ভাই জাহাঙ্গীর, সচেতন যুবক শাহাজাদা প্রমূখ।এ সময় আলমগীরের স্ত্রী মঞ্জুয়ারা তাঁর স্বামীর হত্যাকারী বাবুসহ তার সহযোগীদের  গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

পরে বিক্ষুদ্ধ লোকজন আলমগীর হত্যার মুল হোতা বাবু ওরফে বাবুয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় খবর পেয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রসঙ্গত, জুয়াড়িদের ছুরিকাঘাতে নিহত আলমগীর পেশায় একজন হরেক মাল বিক্রেতা ছিলেন। তাঁর দুই স্ত্রী, ১ মেয়ে ২ ছেলে রয়েছে। 

উপরে