logo
আপডেট : ৯ অক্টোবর, ২০১৯ ১৩:১৪
আবরার হত্যার তীব্র প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের, সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি
অনলাইন ডেস্ক

আবরার হত্যার তীব্র প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের, সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে সন্ধ্যা সাতটায় মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের একাংশ আজ কালো পতাকা মিছিলের আয়োজন করেছে।

এদিকে আবরার হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যায় জড়িতদের  সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতসহ বিভিন্ন দাবিতে আজও উত্তাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাস। সকাল ১০টায় বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রথমে মৌন মিছিল এবং পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ কর্মসূচিতে বুয়েট, ঢাবি ছাড়াও দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়সহ যে কোনো ব্যক্তি অংশ নিতে পারেন বলেন জানান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে রয়েছে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার বিচার, শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ অক্টোবরের মধ্যে প্রত্যাহার, আবাসিক হলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ ও পূর্বের সব ঘটনার তদন্ত।

এছাড়া নতুন করে তুলে ধরা ১০ দফা দাবিতে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিতে রাজনৈতিক কার্যক্রমসহ সব ছাত্র সংগঠন স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধকরণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ দুপুর ১২টায় আবরার হত্যার প্রতিবাদে কালো পতাকা মিছিল করা হবে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন আন্দোলনকারী। এক ফেসবুক পোস্টে আন্দোলনকারীরা জানান, ‘ভারতের সঙ্গে চুক্তির প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে আবরার নিহত হয়েছে। সকলে আসুন আবরারকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের বিচারে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাই। আবরার হত্যার প্রতিবাদে আজ দুপুর ১২ টায় ঢাবির রাজু ভাস্কর্য থেকে  কালো পতাকা মিছিল শুরু হবে।’

বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলে আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ১০ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামছেন শিক্ষার্থীরা।

বুধবার সকাল থেকে এ আন্দোলন শুরু হয়।  আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো-

১. খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে শনাক্তকারী খুনিদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিশ্চিতভাবে খুনি শনাক্তকরণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শনাক্তকৃত খুনিদের আজীবন বহিষ্কার নিশ্চিত করতে হবে।

৩. মামলা চলাকালে সকল খরচ এবং আবরারের পরিবারের সকল ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে। এ মর্মে অফিশিয়াল নোটিশ ১১ তারিখ ৫ টার মধ্যে প্রদান করতে হবে।

৪. দায়েরকৃত মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের অধীনে স্বল্পতম সময়ে নিষ্পত্তি করার জন্য বুয়েট প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বুয়েট প্রশাসনকে সক্রিয় থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিয়মিত ছাত্রদের আপডেট করতে হবে।

৫. অবিলম্বে চার্জশিটের কপিসহ অফিশিয়াল নোটিশ দিতে হবে।

৬. বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে বুয়েটে হলে হলে ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করে রাখা হয়েছে। জুনিয়র মোস্ট ব্যাচকে সবসময় ভয়ভীতি প্রদর্শনপূর্বক জোর করে রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে যুক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে যেকোনো সময় যেকোনো হল থেকে সাধারণ ছাত্রদের জোরপূর্বক হল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে হলে হলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠনের এহেন কর্মকাণ্ডে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ক্ষুব্ধ, তাই আগামী ৭ দিনের (১৫ অক্টোবর) মধ্যে বুয়েটে সকল রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।

৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কেনো ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হবার পরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়নি এবং পরবর্তীতে ৩৮ ঘণ্টা পরে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে বিরূপ আচরণ করে এবং কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন, তাকে সশরীরে ক্যাম্পাসে এসে আজ (০৯/১০/১৯) দুপুর ২ টার মধ্যে জবাবদিহি করতে হবে।

৮. আবাসিক হলগুলোতে র‌্যাগের নামে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের উপর সকল প্রকার শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনকে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। একই সাথে আহসানউল্লা হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের পূর্বের ঘটনাগুলোতে জড়িত সকলের ছাত্রত্ব বাতিল ১১ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখ বিকাল ৫ টার মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে।

৯. পূর্বে ঘটা এধরনের ঘটনা প্রকাশ এবং পরবর্তীতে ঘটা যেকোনো ঘটনা প্রকাশের জন্য একটা কমন প্ল‌্যাটফর্ম (কোনো সাইট বা ফর্ম) থাকতে হবে এবং নিয়মিত প্রকাশিত ঘটনা রিভিউ করে দ্রুততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এই প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বুয়েটের বিআইআইএস একাউন্ট ব্যবহার করতে হবে এবং ১১ অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫ টার মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রদর্শন করতে হবে এবং পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে কার্যক্রম পূর্ণরূপে শুরু করতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সবগুলো হলের প্রত্যেক ফ্লোরের সবগুলা উইংয়ের দুইপাশে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে।

১০. রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরে বাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ অক্টোবর, ২০১৯ তারিখ বিকাল ৫ টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে।