প্রকাশিত : ৯ জুন, ২০২০ ১৫:২৪

ঘুরে দাঁড়াতে চায় এভিয়েশন খাত

অনলাইন ডেস্ক
ঘুরে দাঁড়াতে চায় এভিয়েশন খাত

করোনায় বিপাকে পড়েছে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ছাড়াও বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা, নভোএয়ার ও রিজেন্ট-সব কটি প্রতিষ্ঠান কঠিন সময় পার করছে। দুরবস্থা চলছে পর্যটন খাতে। বেকার হয়ে গেছেন এ খাতের সঙ্গে অনেক মানুষ।

পর্যটন স্পটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হোটেল-মোটেল সব শূন্য। একই অবস্থায় পাঁচ তারকামানের হোটেলও। বিদেশি পর্যটকের পাশাপাশি গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিদেশিরা থাকতেন পাঁচ তারকা হোটেলে। হোটেলের অধিকাংশ কক্ষ খালি। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর সবারই একই দশা। ইতোমধ্যে পর্যটন খাতে সম্পৃক্ত প্রায় ১৫ হাজার কর্মী চাকরি হারানোর শঙ্কা রয়েছে।

দেশের পর্যটন খাতে নভেল করোনার প্রভাবে আর্থিক ক্ষতির হিসাব করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর কাছে চিঠি দিয়েছে প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের (পাটা) গ্লোবাল এক্সিকিউটিভ বোর্ড মেম্বার ও বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান শাহীদ হামিদ। তাদের চিঠিতে ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আর্থিক ব্যবসা হারানোর চিত্র তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে এভিয়েশন খাতে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো ব্যবসা হারাবে ৬০০ কোটি টাকা এবং এ খাতে চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে ২ হাজার জনের। ৩ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হারাবে ট্রাভেল এজেন্টরা, চাকরি হারাতে পারেন ১৫ হাজার।

দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে বিদেশ থেকে অনেকে বাংলাদেশে আসেন এবং ব বিভিন্ন দেশে অনেকে বেড়াতে যান। করোনার কারণে এবার ভরা মৌসুমে ব্যবসায় ধস নেমেছে। অভ্যন্তরীণ পর্যটনও ব্যবসার একটা বড় অংশ। সেখানেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ট্যুর অপারেটররা একটি প্যাকেজের মধ্যে উড়োজাহাজের টিকিট, হোটেল মোটেল, গাইড, যাতায়াত, দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার ব্যবস্থা করে দেন। বুকিং বাতিল হওয়ায় সবাই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে।

পর্যটনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারিভাবে রয়েছে পর্যটন করপোরেশনের অধীনে দেশের বিভিন্ন স্থানে হোটেল-মোটেল। এর বাইরে বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে ওঠা পর্যটন প্রতিষ্ঠানেও ধস নেমেছে। বৈশ্বিক এ মহামারীর জেরে বড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি এ খাতে সম্পৃক্ত ছোট বিনিয়োগকারীরাও বন্ধুর সময় পার করছেন।

করোনার ছোবলে জানুয়ারি থেকে ব্যবসা বন্ধ হতে থাকে এ খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। পর্যটনশিল্পে প্রায় ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)। শিগগিরই পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে বাড়বে ক্ষতির পরিমাণ। উপার্জন বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ের ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড, কমিউনিটি পর্যায়ের মানুষরা বিপদে পড়েছেন।

করোনার কারণে বাংলাদেশ বিমান প্রথমে ওভারটাইম বন্ধ করে। তাতেও খরচের ভারসাম্য সামলাতে না পেরে সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। বিমানের বাইরে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো বলছে, ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে তাদের সরকারিভাবে প্রণোদনাসহ বিশেষ সহযোগিতা দরকার।

এই কোভিড-১৯ আক্রান্তকালে দেশের এভিয়েশন খাত কোথায় ঠেকে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সংশ্লিষ্টরা। ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ থাকলেও কর্মীবাহিনীর বেতন, লিজে আনা উড়োজাহাজের ব্যয়, ঋণের কিস্তি, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ সবই বহন করতে হচ্ছে। বরং বসিয়ে রাখা উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে।

গত ২১ মার্চ থেকে সরাসরি ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় বেবিচক। একমাত্র চীন ছাড়া আন্তর্জাতিক সব রুটে আড়াই মাস যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে গত ১ জুন থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ তিনটি রুটে সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নিজেদের কিছুটা সফল মনে করায় বাংলাদেশ থেকে এবার লন্ডন ও কাতার রুটে সরাসরি ফ্লাইট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

জানা গেছে, শিগগির যুক্তরাজ্য ও কাতারে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এর আগে দেশ দুটির অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। কাতার এয়ারওয়েজ দোহা থেকে ঢাকায় ফ্লাইট পরিচালনা করতে চাইছে। তবে কাতারে কোনো বাংলাদেশি যাত্রী যেতে পারবেন না। করোনা ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে থাকায় সেখানে বাংলাদেশির ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সে জন্য ট্রানজিট যাত্রীরা কাতার হয়ে অন্য দেশে যেতে পারবেন। যুক্তরাজ্যে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা থেকে লন্ডন ও ম্যানচেস্টার রুটে সরাসরি ফ্লাইট চলতে পারবে। এ ছাড়া অন্য কয়েকটি রুটেও সরাসরি ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিল বেবিচক। কিন্তু দেশের করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেই উদ্যোগ থামকে গেছে।

বেবিচক বলেছে, ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে সব এয়ারলাইন্স ও যাত্রীদের শারীরিক দূরত্ব ও পরিচ্ছন্নতার বিধি মেনে চলতে হবে। এয়ারক্রাফটের ধারণক্ষমতার ৭৫ শতাংশের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। যাত্রীদের বসার ক্ষেত্রে দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। যাত্রীদের মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস দিতে হবে। আসা যাওয়ার আগে এয়ারক্রাফট ‘স্যানিটাইজ’ করতে হবে।

বৈশ্বিক মহামারীর কারণে বন্ধ থাকা পর্যটনশিল্প নিয়েও বিপাকে দেশ। অন্য দেশেও পর্যটনের অবস্থা খারাপ। করোনা নিয়েই পর্যটকদের যাতায়াতে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে কথা চলছে। সারাবিশ্বে এ সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অব প্রসিডিউরে (এসওপি) তৈরি করা হচ্ছে। ট্যুর অপারেটর ও হোটেল মালিকরা বলছেন, এসওপি তৈরি করে তা ঘোষণা করে প্রত্যেক দেশের সরকার। এটা দ্রুত দরকার এ জন্য যে, আগামী পর্যটন মৌসুমের জন্য যেন বুকিং দেওয়া যায়। সারাবিশ্বেই পর্যটকদের পদচারণা বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যেও সীমিত আকারে কিছু দেশ পর্যটকদের প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে কী ধরনের নীতিমালা মানতে হবে তা বলা থাকে এসওপিতে।

অক্টোবর থেকে নভেম্বরের কিছু শিডিউল প্ল্যান রয়েছে বিদেশে পর্যটকদের আসার জন্য। সেগুলো যেহেতু বাতিল করা হয়নি তাই কোন নিয়ম মানতে হবে তা নির্ধারণ করাই বড় কাজ। প্রতিবেশী দেশ ভারত, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং জাপান তাদের পর্যটনের জন্য ইতোমধ্যে গাইডলাইন তৈরি করেছে। পর্যটনশিল্পের অগ্রযাত্রা মসৃণ রাখতে এমন উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করেন পর্যটনসংশ্লিষ্টরা। যেমন-শ্রীলংকার পর্যটন মন্ত্রণালয় গত ৪ মে পর্যটকদের জন্য গাইডলাইন তৈরি করে ফেলেছে। এসওপিতে পর্যটন স্পট, ট্যুর গাইড, হোটেল, খাবারসহ সব ধরনের নির্দেশিকা থাকে।

দ্য ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন (ইউএনডব্লিউটিও) একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে সম্প্রতি। এটি বিশ্ব্যবাপী কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে খুব কাজে আসছে পর্যটকদের জন্য। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও ঝুঁকির নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে ওই গাইডলাইনে। আছে সামাজিক দূরত্ব, তাপমাত্রার স্ক্যানার, পরীক্ষা, পরিচ্ছন্নতার মানদ-সহ সমস্ত কিছু।

এ বছরের ৩১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পর্যটন খাতের ওপর গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। এসব গাইডলাইন অনুসরণ করে এসওপি তৈরি করতে পারবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। তবে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড একটা ইঙ্গিত দিয়েছে, চলতি বছরের ১৫ জুনের মধ্যে একটি এসওপি চূড়ান্ত করতে পারে। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদের মতে, বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি কমিটি করা হয়েছে। এটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে সংস্থাটি।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পযটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, এভিয়েশন ও পর্যটন দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই করোনাকালে। তদুপরি সামনে এগোতে হবে। অভ্যন্তরীণ রুটে জাহাজ চলছে। আন্তর্জাতিক রুটেও চালুর চিন্তাভাবনা চলছে। পাশাপাশি পর্যটন খাতকেও সমৃদ্ধ করতে হবে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।

উপরে