জয়পুরহাটের কালাইয়ে পিআইও এর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

জয়পুরহাটে কালাই উপজেলায় মাত্রাই ইউনিয়নের শালগুন রাস্তার ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রীজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সীল, স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া বিল করে ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে কালাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউদ্দীন আহমেদ। এ অভিযোগ করেছে ওই ব্রীজ নির্মানকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাইদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবু সাইদ ও তার প্রতিনিধিরা।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সোমবার বেলা ১২টায় জয়পুরহাটের সাংবাদিকরা তথ্য নিতে যায় কালাই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসে। সাংবাদিকদের দেখে তিনি তার কক্ষে তালা লাগিয়ে সাংবাদিক এবং ঠিকাদারের প্রতিনিধিদের গালিগালাজ করে অফিস থেকে বেড়িয়ে যান। পরে সাংবাদিকরা তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিকদের অকথ্য গালিগালাজ করেন। এছাড়া ঠিকাদারদের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদেরকেও গালিগালাজ করেন।
এ সময় অফিসে থাকা তার অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম জানান, আমি প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউদ্দীনের নির্দেশে উপজেলা হিসাবরক্ষন কর্মকর্তার কাছে জমা দেই এবং বিলটি নিয়ে আসি এবং পিআইও কে দেই।ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সাইদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আবু সাইদ সাংবাদিকদের জানান, আমি গত ৪ মাস আগে ব্রীজের কাজ শেষ করেছি। দুই দফায় বিল ও তুলেছি। শেষ বিলটি ২৯ জুনে পিআইও নিজেই তুলে আত্মসাৎ করেছে। নির্মিত ব্রীজের শেষ বিল তোলার জন্য কালাইয়ে যাইনি বা কোথাও কোন সই-স্বাক্ষর করিনি। আমি মোবাইল ফোনে বহুবার বিলের জন্য যোগাযোগ করেছি আমাকে পাত্তাই দেয়নি পিআইও। আমার সীল, স্বাক্ষর জাল করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউদ্দীন আহমেদ ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারের প্রতিনিধি শামিনুর, সুমন সাংবাদিকদের অভিযোগ করে জানান, কালাই উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউদ্দীনকে ফোন করলে তিনি তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধুমকি দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, তোরা সাংবাদিকদের নিয়ে এসেছিস? সাংবাদিকদের কাছ থেকেই বিলের টাকা নে। এবার যদি তোরা কালাই আমার অফিস আসিস তোদেরকে কোপানো হবে। তোদের কোন বাপ আছে সাথে নিয়ে আসিস।এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে তথ্য জানতে চাওয়া হলে তিনি সাংবাদিকদের মুঠোফোনে বলে, আমি তোদের বাপ। এসব নিউজ করে তোরা কি করবি।
এ ব্যাপারে কালাই উপজেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের কাছে যাওয়া হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার কাছে সাইদ ট্রেডার্সের ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকার একটি বিল এসেছিল। সেটি আমি পাশ করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউদ্দীন আহমেদের কাছে দেই। তিনি বিলটি ঠিকাদারকে দিয়েছেন কিনা বা নিজে খেয়েছেন সেটা আমার জানা নেই।কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফাজ উদ্দীন জানান, ঘটনাটি আমি শুনেছি। আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখতেছি।জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ মোফাখ্খারুল ইসলাম জানান, আমি মৌখিকভাবে অভিযোগটি পেয়েছি। তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউদ্দীন আহমেদ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, অভিযোগ পেলে কালাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউদ্দীন আহমেদ এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে কালাই উপজেলা সাংবাদিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের জানান, কালাইয়ের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে টাকা না দিলে প্রকল্পের বিল পাওয়া পাওয়া যায়না। কালাই উপজেলার যেসব প্রকল্প পিআইও এর অধিনে রয়েছে এ প্রকল্পগুলো তদন্তের জন্য দাবী জানিয়েছেন কালাই উপজেলার সর্বস্তরের জনগন।
কালাইয়ের সাংবাদিকরা জানান, এই পিআইও এর খুটির জোর কোথায়? সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করে এখন তার পদে বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাই কালাইয়ের সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা কালাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউদ্দীন আহমেদের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি বিচারের দাবী করে সংশ্লিষ্টদের কাছে।