বছরজুড়ে ভোলায় ৩০ মার্ডার, ১৪৫ ধর্ষন অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় আতংকিত ছিলো মানুষ
ভোলায় নানা ঘটনার মধ্যে ২০১৯ সাল কাটলেও সারাবছরই আলোচিত ছিলো ধর্ষন ও হত্যা কান্ডের ঘটনা। অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় আতংকিত ছিলো মানুষ। বিশেষ করে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগজনক। গত ১ বছরে জেলায় ১৪৫টি ধর্ষণ এবং ৩০টি হত্যাকান্ডে ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে শিশু ধর্ষণ। জেলায় গণধর্ষণ ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।
পুলিশের অভিযানে আসামি গ্রেফতার এবং আদালতে দোষীদের শাস্তি হলেও বছড়জুড়ে আলোচিত হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা। জমি বিরোধসহ নানা কারণে ঘটেছে হত্যাকান্ড। আইনজীবীরা বলছেন, আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার দীর্ঘজট দেখা দিয়েছে। ভোলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ঝুলে আছে ৫ হাজারের মত মামলা। যার মধ্যে ধর্ষণ মামলা অন্তত ২০০। ভোলার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গত এক বছরে ১৪৫টি ধর্ষণ এবং ৩০টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৫টি ধর্ষণ ও ৩টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ফেব্রুয়ারিতে ঘটেছে ৫টি ধর্ষণ ও ১টি হত্যা। মার্চ মাসে হতাকান্ড না থাকলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১০টি। এপ্রিল মাসে ২০টি ধর্ষণ ও ৫টি হত্যার ঘটনা ঘটে। মে মাসে ১৭ জনকে ধর্ষণ ও ১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। জুনে ১৫টি ধর্ষণ ও ৪টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। জুলাইয়ে ১৩টি ধর্ষণ ও ৪টি হত্যা, আগস্টে ৭টি ধর্ষণ ও ২টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। সেপ্টেম্বরে ১৪টি ধর্ষণ ও ২টি হত্যা এবং অক্টোবর মাসে ৮টি ধর্ষণ ও ৩টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। নভেম্বর মাসে ২টি হত্যা ১২টি ধর্ষন এবং ডিসেম্বর মাসে ২টি হত্যা ও ৫টি ধর্ষনের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে এপ্রিল মাসে। এ মাসেই ২০টি ধর্ষণ এবং ৫টি হত্যাকান্ড ঘটেছে।
সূত্রটি আরও জানায়, ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয়েছে ভোলা সদর, চরফ্যাশন ও লালমোহন উপজেলায়। ওই সব মামলায় বেশিরভাগ আসামি গ্রেফতারও হয়েছে।
বছরজুড়ে চাঞ্চল্যকর দু’টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ভোলা সদর এবং মনপুরা উপজেলায়। এর মধ্যে ঈদের আগের রাতে সদরের চরসামাইয়া ইউনিয়নে এক শিশুকে ধর্ষণ করে ৩ পাষন্ড। ঘটনার পর ১৪ আগস্ট পুলিশের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ধর্ষণ মামলার ২ আসামি মঞ্জু ও আলামিন মারা যায়।
এছাড়াও ১৮ জানুয়ারি গভীর রাতে লালমোহন উপজেলার চরভূতা গ্রামে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় খালা ও ভাগ্নিকে। ১৯ এপ্রিল জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে টেঁটাবিদ্ধ করে বীরেন্দ্র নামে এক জনকে হত্যার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ৩ আত্মীয়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০ অক্টোবর ভোলার বোরাহনউদ্দিনে পুলিশের সঙ্গে জনতার সহিংসতায় ৪ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা না হলেও অজ্ঞাতনামা ৫ হাজার জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
২৬ অক্টোবর ভোলার মনপুরায় ঘটে আরেক গণধর্ষণের ঘটনা। ছাত্রলীগ নেতাসহ ৫ জন মিলে এক নারীকে নির্জন চরে নিয়ে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে।
৬ অক্টোবর মনপুরার চরফৈজউদ্দিন গ্রামে এক ব্যবসায়ীকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ৫ আসামিকে গ্রেফতার করে। ভোলা আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট কিরন তালুকদার জানান, বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমানে ধর্ষণ অনেক বেড়ে গেছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ঝুলে আছে ৫ হাজার মামলা। এর মধ্যে ধর্ষণ মামলা রয়েছে ২০০টি। আদালতে ৭৪টি মামলা বিচারধীন। আমরা সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।
তবে বিচারক স্বল্পতার কারণে কিছু কিছু মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় লাগছে। তিনি আরও বলেন, কিছু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে প্রেমঘটিত কারণে, যার বেশিরভাগই সাজানো মামলা। এছাড়াও ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে, যা নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। এ পর্যন্ত ১৫টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আমরা সব মামলা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

ভোলা প্রতিনিধি