পঞ্চগড় হতে নিখোঁজ হওয়া যুবককে টাঙ্গাইলে উদ্ধার করেছে পুলিশ
আত্মগোপনের নাটক সাজিয়ে স্ত্রীর কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করার ১৩ দিন পর পঞ্চগড়ের হাবিবুর রহমান (২৯) নামের এক ব্যাক্তিকে টাঙ্গাইলে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গত ২৫ এপ্রিল মধ্যরাতে টাঙ্গাইল শহরের পূরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন তাজমহল আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষ হতে উদ্ধার করার পরদিন তাকে পঞ্চগড়ে আনা হয়। হাবিবুর রহমান পঞ্চগড় পৌর এলাকার পূর্ব জালাসি এলাকার লেবু মিঞার ছেলে। পেশায় তিনি একজন পোল্ট্রি খামার ব্যবসায়ী। তবে তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় থানায় আনার পর রাতেই হাবিবুরকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে অনেকেই।
পুলিশ ও তার পরিবার জানায়, হাবিবুর রহমান গত ১২ এপ্রিল দুপুরের পর ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফিরেননি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে রাখেন তিনি। গত ১৬ এপ্রিল হাবিবুর তার স্ত্রী আছিয়া বেগমের কাছে নতুন একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে ফোন করে বলে যে তাকে হাইজ্যাক করা হয়েছে। এখান থেকে মুক্তি পেতে এক লাখ টাকা দিতে হবে। পরে মুক্তিপণের টাকা নিতে কয়েকবার তার স্ত্রীকে ফোন দেয় হাবিবুর। মুক্তিপণ দাবির পর হাবিবুরের বাবা লেবু মিঞা গত ১৮ এপ্রিল পঞ্চগড় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। থানায় ডায়েরির পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে। একই সাথে তার স্ত্রীর কাছে আবারও হাবিবুরের ফোন কল আসলে পুলিশকে তাৎক্ষনিক জানাতে বলে। এবার পুলিশ তার নতুন মোবাইল নাম্বারটি নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে। পরবর্তীতে কল করলে পুলিশ তার স্ত্রীকে এক লাখ টাকা দেওয়ার জন্য স্বীকার করার নির্দেশ দেয়। সেই মোতাবেক আছিয়া বেগম গত ২২ এপ্রিল হাবিবুরের ফোন পাওয়ার পর এক লাখ টাকা তার হাতে তুলে দিতে রাজি হয়। এরপর হাবিবুর গত ২৩ এপ্রিল দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে টাকা নিয়ে আসতে বলেন। হাবিবুরের কথামতে আছিয়া বেগম ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ওই তারিখে পৌঁছে যায়। এ সময় পুলিশ তার পিছু নেয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হাবিবুর তার স্ত্রীকে ফোন করে বলেন, তুমি পুলিশের সাহায্য নিয়েছো। সেদিন আছিয়া বেগম দুপুর থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলে পরে মোবাইল বন্ধ রেখে পালিয়ে যায় হাবিবুর। এরপর পুলিশ আবারও হাবিবুরের নতুন ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটির অবস্থান তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে শনাক্ত করে। পুলিশ গত ২৪ এপ্রিল শনিবার হাবিবুরের অবস্থান নিশ্চিত হয় যে, সে টাঙ্গাইল সদর থানার আদালত পাড়ায় অবস্থান করছে। পরে ২৫ এপ্রিল মধ্যরাতে টাঙ্গাইল শহরের পূরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন তাজমহল আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষ হতে উদ্ধার করে ২৬ এপ্রিল রাতে পঞ্চগড় সদর থানায় নিয়ে আসে।
পঞ্চগড় সদর থানার উপ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাধারন ডায়েরির পর থেকে বিষয়টির তদন্ত শুরু করি। হাবিবুর আতœগোপনে থাকার নাটক সাজিয়ে তার স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল। শুধুমাত্র পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন একটি মোবাইল সিম ক্রয় করেছিল। তথ্যপ্রযুক্তির কৌশল ব্যবহার করে তার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।
পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আবু আককাছ আহমেদ বলেন, হাবিবুর নিজেই আতœগোপনে গিয়েছিল। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের কারণেই দ্রুত হাবিবুরের অবস্থান নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে হাবিবুর বলেছে তার ব্যক্তিগত প্রায় লক্ষাধিক টাকা ধার দেনা হয়েছে। এজন্যই সে আতœগোপনে গিয়ে স্ত্রীর কাছে মুক্তিপণের নাটক সাজিয়ে টাকা দাবি করেছে। তার পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় উদ্ধারের পর ২৬ এপ্রিল রাতেই জিজ্ঞাসাবাদের পর হাবিবুরকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

পঞ্চগড় প্রতিনিধি