প্রকাশিত : ৫ অক্টোবর, ২০২১ ২২:১৬

বগুড়ায় জেলা পুলিশের মধ্যস্থতায় মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের বিরোধ নিরোসন

ষ্টাফ রিপোর্টার
বগুড়ায় জেলা পুলিশের মধ্যস্থতায় মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের বিরোধ নিরোসন

সাধারণ সভা ও আসন্ন নির্বাচন কে ঘিরে বগুড়ায় মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দদের নিজেদের মাঝে থাকা বিরোধের নিরসন হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বিপিএম-সেবা এর নেতৃত্বে জেলা পুলিশের মধ্যস্থতায় নিরপেক্ষ ভেন্যুতে নির্বাচন আয়োজনসহ ১১টি শর্ত মানার অঙ্গিকার এর মাধ্যমে মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই বিরোধের ইতি হয়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বগুড়া জেলা পুলিশ কর্র্তৃক প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে সাধারণ সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনাকাঙ্খিত বিরোধে জড়িয়ে পরেন যা নিয়ে যেকোন সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। মোটর শ্রমিক নেতৃবৃন্দের এই বিরোধ নিরসন করার লক্ষ্যে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্তী একাধিকবার শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় সর্বশেষ মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সভাকক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের দুইটি পক্ষই উপস্থিত হয় সেখানেই শান্তিপূর্ণভাবে দুই পক্ষের সম্মতিতে ১১টি শর্ত সম্বলিত একটি অঙ্গিকারনামাও তৈরি হয় যাতে ইউনিয়নের ২ পক্ষের নেতৃবৃন্দরাই স্বাক্ষর করেন। 

শর্তসমূহ হলো: ১. সাধারণ সভায় নির্বাচনের স্থান নির্ধারণ করা হবেনা। প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে নির্বাচনের উপর্যুক্ত স্থান ও তারিখ নির্ধারণের বিষয়ে সমন্বিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্বাচনের সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে বগুড়া জিলা স্কুল, আলতাফুন্নেছা মাঠ, আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিন স্টেডিয়াম এবং সেন্ট্রাল স্কুল বগুড়ার মধ্যে যেকোন একটি স্থান নির্ধারন করা হবে তবে এক্ষেত্রে বগুড়া জিলা স্কুলকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ২. সভাস্থলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিমিত্তে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও পানির ব্যবস্থা রাখা হবে। ৩. সেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে সাধারণ সভাস্থলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। ৪. সড়ক মহাসড়কে যেন যানবাহন চলাচলে বিঘ্নতা সৃষ্টি না হয় সেজন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ৫. ভেন্যু ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপকমিটি গঠন পূর্বক সুষ্ঠু ও শান্তিশৃঙ্খল পরিবেশে সাধারণ সভা সুসম্পন্ন করা হবে। ৬. বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যে নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্তে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা পূর্বক দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ৭. ব্যালটের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে সাধারণ সভা চলাকালীন সময়ে শ্রমিকদের নিকট হ্যাঁ/না মতামত চাওয়া হবে না। ৮. সাধারণ সভায় কোন ধরণের নির্বাচনী প্রচারণা, স্লোগান বা মতামত প্রদান করা থেকে বিরত থাকব। ৯. বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের লাল কার্ডধারী প্রকৃত ভোটার ব্যতিত কোন শ্রমিক বা বহিরাগত ব্যক্তি সাধারণ সভার ভেন্যুতে প্রবেশ করবে না। ১০. সাধারণ সভার সম্পূর্ণ সমাবেশস্থল সিসি ক্যামেরার আওতায় আনয়ন করে ভিডিও সংরক্ষণ করা হবে। ১১. বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রের বিধান মোতাবেক ৬০(ষাট) দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।   

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, জেলা পুলিশ সুপারের সার্বিক নেতৃত্বে একাধিকবার শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠকের পর সর্বশেষ মঙ্গলবার উক্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিরসন হয়েছে। শুধু তাই নয় দুই পক্ষের সম্মতিতে করা ১১টি শর্ত সম্বলিত একটি অঙ্গিকারনামাও নেতৃবৃন্দরা জেলা পুলিশ সুপার বরাবর দাখিল করেছেন এবং নিজেরা একে অপরকে মিষ্টিও খাইয়েছেন। শান্তিপূর্ণ এই সমাধানই সকলের কাম্য ছিল মর্মে তিনি আরো জানান, সভায় মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সম্মুখসারির নেতৃবৃন্দদের মাঝে আব্দুল হামিদ মিটুল, সামছুদ্দিন শেখ হেলাল, কামরুল মোর্শেদ আপেল, সৈয়দ কবির আহম্মেদ মিঠু, আব্দুল মান্নানসহ ২ পক্ষের নেতৃবৃন্দরাসহ জেলা পুলিশের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে আব্দুর রশিদ (অপরাধ) ও মোতাহার হোসেন (ডিএসবি), বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: সেলিম রেজা, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) রফিক ইসলাম সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে জেলা পুলিশের হস্তক্ষেপে ১১টি শর্ত সাপেক্ষে আগামী ৭ অক্টোবর ভবের বাজার ট্রাক টার্মিনালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সাধারণ সভা ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নেতৃবৃন্দদের নিজেদের মাঝে এই বিরোধ নিরসনের বিষয়টি মুঠোফোনে নেতৃবৃন্দদের পক্ষে নিজেও নিশ্চিত করেছেন সামছুদ্দিন শেখ হেলাল।       

উপরে