প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর, ২০২২ ১৬:৪৮

নিয়ামতপুরে অনুষ্ঠিত হল আদিবাসীর জীবন জীবিকা ্ও সাংস্কৃতিক মেলা

প্রেস বিজ্ঞপ্তি
নিয়ামতপুরে অনুষ্ঠিত হল আদিবাসীর জীবন জীবিকা ্ও সাংস্কৃতিক মেলা
দিন যতই গড়াচ্ছে ততই আধুনিকতা ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আদিবাসীর সংস্কৃতি ও তাদের জীবন জীবিকার ধরণ পাল্টাচ্ছে। আদিবাসীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে তাদের চিরায়িত সংস্কৃতি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে  আদিবাসীরা তাদের শেকড়কে ভুলে যাচ্ছে। ফলে আদিবাসীর ভাষা, সংস্কৃতি ও প্রাণ-প্রকৃতি দিনকে দিন হারিয়ে যেতে বসেছে।

পাহাড় ও সমতল সব জায়গায় এখন একই অবস্থা। এমতব্যস্থায় বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জাতিসত্তার চর্চা, তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে পুনরাজ্জীবিত করার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাব্রতী সংগঠন ডাসকো ফাউন্ডেশন হেক্সস/ইপার এর সহযোগিতায় রিভাইভ প্রকল্পের আওতায় একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। অত্র অঞ্চলের আদিবাসী যুব ফোরাম ও আদিবাসী নারী প্লাটফর্ম-এর উদ্যোগে দিনব্যাপী আদিবাসী মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব -২০২২ এর আয়োজন করা হয়। পুরো আয়োজনটি হয়ে ওঠেছিল আদিবাসীদের জন্য সাংস্কৃতি উৎসব ও জাতিসত্ত¡ার চর্চার একটি মিলন মেলা।

আদিবাসীদের এই মেলায় নওগাঁ ও চাপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি উপজেলা থেকে প্রায় সহস্রাধিক ক্ষুদ্র নৃতাত্তিক জাতিগোষ্ঠীর সম্প্রদায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। সাওতাল, ওরাওঁ, মুণ্ডা, রবিদাস, রাজবংশী, মাহাতো, শিং, মাহালী ও রাজোয়ারসহ প্রায় এগারটি সম্প্রদায় মেলায় তাদের হারিয়ে যাওয়া কৃষ্টি-কালচারের প্রদশর্ণ করেছিল। আদিবাসীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা আজ পূরণ হল।

গত ২৩ নভেম্বর ২০২২ রোজ বুধবার ঠিক সকাল ১০ টায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে মেলার উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় খাদ্য মন্ত্রী জনাব সাধন চন্দ্র মজুমদার। রিভাইভ প্রকল্পের আদিবাসী নারী প্লাটফর্মের সভানেত্রী সাগরিকা বিশ^াস এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জনাব মুহাম্মদ রাশিদুল হক, বিপিএম, পুলিশ সুপার, নওগাঁ।  জনাব ফরিদ আহম্মেদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, নিয়ামতপুর, নওগাঁ।  জনাব মো. ফারুক সুফিয়ান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নিয়ামতপুর নওগাঁ।  ডোরা চৌধুরী, কান্ট্রি ডিরেক্টও, হেক্সস/ইপার বাংলাদেশ, জনাব মোঃ আকরামুল হক প্রধান নির্বাহী অফিসার, ডাসকো ফাউন্ডেশন। এছাড়াও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সমতল ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষ স্বতঃস্ফূতভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

মেলায় চাঁপাই নবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির নানা সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ও যুবারা মেলায় অংশগ্রহন করেছেন এবং তাদের নিজ নিজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছেন। সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ও মৌলিকত্ব মানুষের অন্যতম অধিকার। সমতলের ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠির সকল জাতিসত্ত¡ার সংস্কৃতি, ঐতিহ্যগত প্রথা, জীবনাচার ইত্যাদি টিকিয়ে রাখতেই সকলের সম্মিলিত প্রয়াসের কথা ব্যক্ত করেন আদিবাসী নেতারা। এছাড়াও প্রতিবছর যাতে এরকম একটি আদিবাসী উৎসবের আয়োজন করা হয় সেটিরও জোর দাবি জানিয়েছেন সকল সম্প্রদায়ের গণমানুষ। এই মেলার প্রধান আকষর্ণ ছিল নৃতাত্তি¡ক জাদুঘরের মতো সারি সারি সাজানো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের স্টল। যেখানে স্থান পেয়েছিল আদিবাসীদের ব্যবহার্য বিলুপ্তপ্রায় জিনিসপত্র যেমন তীর, ধনুক, বর্শা, বল্লম, মাদুলি, পায়েরী, খংস, বাজু নানাধরণের তৈজসপত্র।

আদিবাসী সম্প্রদায়গুলো তাদের কৃষ্টি-কালচারকে তুলে ধরতে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক তাদের নিজস্ব ভাষায় তাদের সাংস্কৃতিকে তুলে ধরে নাচ ও গান পরিবেশন করে দর্শণার্থীদের মুগ্ধ করেন। এছাড়াও  আদিবাসীদের নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাওয়াপুড়া ফুটবল একাদশ ও নওগাঁ জেলার আদিবাসী তেরুপ ফুটবল একাদশ এর মধ্যে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।  প্রতিটি জাতিসত্ত¡া তার নিজস্বতা নিয়ে বাধাঁহীনভাবে অগ্রসর হবে। এই সাংস্কৃতিক উৎসবে সকলের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে আমরা আগামীর অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে এই অঙ্গিকার নিয়ে দিনব্যাপী মেলার সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।  

উপরে