নূর আলম হত্যাকান্ডের রহস্য !!

কেন আর বা কি কারনেই দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হয়েছিলেন নুর আলম!!এমন প্রশ্নের বিরাজ করছে বগুড়া বাসীর মনে!!
৫'ই আগষ্ট ২০২৪ ইং তারিখে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হওয়ার পরে বগুড়া শহরে আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিল নূর আলম।আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ ও মিছিল শেষে খান্দার,মালগ্রাম এলাকায় মিষ্টি বিতরন করাই কাল হয়ে দাঁড়ায়!!বগুড়া থেকে বাড়ি ফেরার পথে হত্যা হয়েছিল নূর আলম।বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার খরনা ইউনিয়নের কুন্দদেশমা গ্রামের মোঃমোফাজ্জল হোসেন কনিষ্ঠ পুত্র নূর আলম (২৭)প্রায় আট মাস আগে দুর্বৃত্তদের হামলায় ০৫'ই আগষ্ট ২০২৪ ইং তারিখে অনুমানিক রাত ০৭.৩০ মিনিটে কুন্দদেশমা বাজারে নিহত হয়।তবে তার মৃতদেহটি জামহাট/জামাটা রাস্তার পাশে অনুমানিক রাত ১০.৩০ মিনিটে পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখতে পায় গ্রামবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,নূর আলম কাহালুর মালঞ্চা আজিজুল হক মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজ থেকে অনুমানিক ১৭-১৮ সালে ডিগ্রী পাস করেছিল।বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি আবেদন করে কিন্তু কোথাও চাকরি না পেয়ে নিজেই খামার প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়।তিনি একটি হাঁসের খামার পরিচালনার করতেন পাশাপাশি নিজ এলাকা সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইট-বালুর ব্যাবসা করতেন।নূর আলম কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত না থাকলেও সবার সাথে তার ভাল সম্পর্ক ছিল।২০২১ সালের নির্বাচনের পর থেকে নূর আলম তার এলাকা সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিজের আধিপত্যকে ধরে রাখার জন্য প্রায় বাকবিতন্ডাতে জরিয়ে পরতেন।তার নামে হত্যা চেষ্টা সহ আরো একটি মামলা রয়েছে।
অনুসন্ধানের জানা যায়,গত ০৫ আগষ্ট ২০২৪ইং তারিখে নূর আলম দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয়।হামলাকারী সন্ত্রাসীরা পূর্ব শত্রুতার জেরে ও নিজেদের অধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে নূর আলম কে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে।নিহত নূর আলমের সাথে সবারই ভালো সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়।তবে বিপত্তি ঘটে ২০২১ ইং তারিখে ০৫ খরনা ইউনিয়ন পরিষদের ০১ নং ওয়ার্ডের নির্বাচন ও কুন্দদেশমা এলাকায় ইট-বালুর ব্যাবসাকে কেন্দ্র করে।সন্ত্রাসীদের গডফাদার বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের এক বড় নেতার অনুসারি ছিলেন।স্বৈরাচারী সরকারের শাসন আমলে নিহতের মামাতো ভাই মোঃজিহাদুল ইসলাম ০৫ নং খরনা ইউনিয়ন পরিষদের ০১ নং ওয়ার্ডে সতন্র প্রার্থী হিসেবে মেম্বার পদে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন।একই নির্বাচনে কুন্দদেশমা এলাকার আশীর্বাদ প্রাপ্ত সতন্র প্রার্থী হিসেবে মেম্বার পদে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন মোঃমাজেদ আলী।তখন থেকেই যেন শুরু হয়ে যায় রেষারেষি!!নিহতের মামাতো ভাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বড় নেতা সহ নেতার অনুসারি ও তার চ্যালা-প্যালারা।২০২১ সালে ০৮ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের দিনটি বেশ স্বাভাবিক ছিল অনুমানিক বিকাল ০২.৩০-০৩.৩০মিনিটে কেন্দ্র দখলের ও হট্টগোলের অভিযোগ ও আছে বলে জানা যায়।ভোট কেন্দ্রটি অবস্থিত ছিল দেশমা ইউনিয়নের দেশমা প্রাইমারি স্কুলে।মোঃমাজেদ আলীর নির্দেশে কেন্দ্রীটি সম্পূর্ণ দখলে নেয়ার চেষ্টা করে আব্দুল বাছেদ আকন্দ।তখন বাসেদ বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে শুরু হয় ভোট কেন্দ্রের ভোটার সহ প্রার্থীদের লোকজনের।এই হট্টগোলের কারনে ভোটকেন্দ্র ভোট গ্রহণ বন্ধ করা হয় এবং ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করা হয়।০৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বড় নেতার আশির্বাদে ভোটের ০৭ দিন পরে বিজয়ী হন মোঃআব্দুল বাসেদ অকন্দ এমনো গুজব ছড়িয়ে করেছিল সম্পূর্ণ উপজেলায়।তবে শিয়ালচাপর,দেছমা,শিবদেছমা,শাতকানিয়া আর কুন্দুদেছমা মিলে একটাই কেন্দ্র হওয়ায় কারনে প্রতিবারের নাকি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এই আওয়ামীলীগের নেতা আব্দুল বাছেদ আকন্দের নামে।
০৫'ই আগস্টে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পরে নূর আলম বগুড়া শহরে আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ শেষে শহরের খান্দার ও মালগ্রাম এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেন।অথচ তাকেই আওয়ামী সমর্থক বানিয়ে তার হত্যার সংবাদ পরিকল্পিত ভাবে প্রকাশ করেছিল তার হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ওয়ার্ড আওয়ামিলীগ সভাপতি,সেচ্চাসেবকলীগ সভাপতি ও যুবলীগ নেতা সহ আরো অনেকেই!!অতঃপর তিনি বিকালে তার বন্ধু মিষ্টারের সাথে ফোনালাপ শেষে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।মিষ্টার সাতকানিয়া মধুপুর গ্রামের বাসিন্দা।বীরগ্রামে দুই বন্ধু একত্রিত হয়ে অনুমানিক রাত ০৭.৩০ মিনিটে দেশমা বাজারে পৌঁছালে অতর্কিতভাবে দুর্বৃত্তরা তাদের উপরে হামলা করে।তাদের হামলায় মিস্টার মাথায় আঘাত পেয়ে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যায়।আর নুর আলম প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে মোটরসাইকেল নিয়ে জামহাট/জামাটা দিকে পালানোর চেষ্টা করে।সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেল নিয়ে তার কিছু ধাওয়া করে দেশীয় অস্ত্র দ্বারা কুপিয়ে ও লোহার রড দিয়ে মাথা থেঁতলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে স্থান ত্যাগ করে।
অনুসন্ধানের আরো জানা যায়,এই হত্যাকান্ডের পর শাজাহানপুর থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়।একটি মামলার বাদী মোঃনাছিমা খাতুন।আরেকটি মামলার বাদী মোঃআতিকুর রহমান।মোছাঃনাছিমা খাতুন দায়ের করেছেন হত্যা মামলা আর মোঃআতিকুর রহমান করেছেন হত্যা চেষ্টা মামলা।আবার একে অপরের বিপক্ষে মানববন্ধন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশকের কথাও জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি বলেন,আমরা জামহাটা/জামাটার রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় নূর আলমের ব্যাবহৃত মোটরসাইকেলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখতে পাই।সেখান থেকে অনুমানিক ৪০০ মিটার পরে রক্তাক্ত মৃত দেহটি দেখতে পাই এবং তাদের পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়।তবে নূর আলম যেখানে পড়েছিল সেখানে কোন রক্তের চিহ্ন ছিল না।তার সম্পূর্ণ শরীর কাদায় মাখানো ছিল।
নূর আলমের মা মোছাঃনাছিমা খাতুন বলেন, আমরা সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় আমার ছোট ছেলে নূর আলমকে সনাক্ত করে দ্রুত শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।খুলনা ইউনিয়নের ০১ নং ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল বাছেদ আকন্দের নির্দেশে সাবেক মেম্বার শহিদুলের সন্ত্রাসী বাহিনী দেশমা বাজারে হামলা করে।নূর আলম প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে মোটরসাইকেল নিয়ে জামাটার দিকে পালানোর চেষ্টা করে।এসময় নূর আলমকে সন্ত্রাসীরা ধাওয়া করে জামাটায় গিয়ে পাকরাও করে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় তখন নূর আলম আত্মরক্ষার্থে তাদেরই অস্ত্র কেড়ে নিয়ে দুই-তিনজনকে ছুড়িকাঘাতে আহত করে আবারো পালানোর চেষ্টা করে।তবে সন্ত্রাসীরা নূর আলম কে সম্পূর্ণ গ্রাম ধাওয়া করে হত্যা করে জামাটা রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে যায়।নূর আলম ০৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে মারা যায়।আমি এই বিষয়ে শাহাজাহানপুর থানায় ১২ জন সহ অজ্ঞাত ৭-৮ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করি।
আমি আমার সন্তান হত্যার সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোঃওয়াদুদ আলম বলেন,গত বছরের ০৫'ই আগষ্ট নূর আলমের মা মোছাঃনাছিমা খাতুন ১২ জন সহ অজ্ঞাত ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।অপরদিকে মোঃআতিকুর রহমান বাদী হয়ে ০৮ জন সহ অজ্ঞাত ৮-৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন।নূর আলম হত্যাকান্ডের ০৩,০৬ ও ০৭ নং আসামি কে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।আর ওপর হত্যা চেষ্টা মামলার সকল আসামি গন জামিনে রয়েছেন।এ বিষয়ে তদন্ত ও আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান চলমান আছে।
(চলবে.....)