সৈয়দপুরের শোকাবহ ট্রেন ট্রাজেডি ও গণহত্যা দিবস

১৩ জুন ১৯৭১ সালের সেই শোকাবহ ট্রেন ট্রাজেডি ও গণহত্যা দিবস। মুক্তিযুদ্ধকালীন এই দিনে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের গোলাহাট এলাকায় পৈশাচিক হানাদার পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় অবাঙ্গালী দোসররা প্রায় সাড়ে ৪ শ’ সংখ্যালঘু হিন্দু ও মাড়োয়ারী সম্প্রদায়ের নারী- পুরুষ ও শিশুকে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে একটি ট্রেনে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। বর্বর হত্যাযজ্ঞের স্থানটি সৈয়দপুর শহরের গোলাহাট বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত।
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সৈয়দপুরের চিত্রপট ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান বিভক্তির পর বিপুল সংখ্যক অবাঙ্গালী (উর্দূভাষী) সৈয়দপুর শহরে এসে আশ্রয় নেয়। আর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিকামী বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় অবাঙ্গালীরা। এরা ছিল হানাদার পাকবাহিনীর বিশ্বস্ত দোসর। ফলে এদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় পাকহানাদার বাহিনীর শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয় সৈয়দপুর।
দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে অবাঙ্গালীদের হত্যাযজ্ঞের শিকার হয় অগণিত বাঙ্গালী। এদের সঠিক হিসাব না থাকলেও বিভিন্ন সূত্রমতে, এ সংখ্যা দেড় সহস্রাধিক। আর মুক্তিযুদ্ধকালীন সৈয়দপুর শহরে ১৩ জুন সংঘটিত হয় সর্ববৃহৎ ও লোমহর্ষ গণহত্যা। এই দিন শহরের বসবাসরত সংখ্যালঘু হিন্দু ও মাড়োয়ারী পরিবারে সদস্যদের নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে রেলওয়ে স্টেশনে জড়ো করা হয়। এরপর সবাইকে তোলা হয় একটি বিশেষ ট্রেনে। পরে ট্রেনটি শহরের উপকণ্ঠে রেলওয়ে কারখানার শেষে প্রাপ্তে গোলাহাট এলাকায় নিয়ে গিয়ে থামিয়ে দেওয়া হয়। এখানে হানাদার পাক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর অবাঙ্গালীরা একে একে ৪শ’ ৪৮ জন সংখ্যালঘু হিন্দু ও মাড়োয়ারী পরিবারের নারী, পুরুষ ও শিশুকে জবাই ও বিভিন্নভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সে দিনের ওই বর্বর হত্যাযজ্ঞ থেকে মাত্র ক’জন পালিয়ে বাঁচলেও সেদিনের স্মৃতি মনে করে আজো আঁতকে ওঠেন তারা। সেই দুঃসহ স্মৃতির বেঁচে আছেন ক’জন। শহরে এমনও পরিবার রয়েছে যাদের কোন সদস্যকে সেদিন বাঁচতে দেওয়া হয়নি। সে সব শহীদদের স্মরণে দীর্ঘ সময় পর গোলাহাট বধ্যভূমিতে গড়ে তোলা হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ।
এদিকে,বছর ঘুরে আজ আবারও ফিরেছে এসেছে ১৩ জুন। তাই দিনটি এলেই স্বজনহারা অনেকে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। কেউবা নিরবে ফেলেন চোখের জল। তাই প্রতি বছর ১৩ জুন দিন সৈয়দপুরের গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
আজ ১৩ জুন গোলাহাট ট্রেন ট্র্যাজেডি ও গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সৈয়দপুর হিন্দু কল্যাণ সমিতি ও স্বরনিকা পরিষদ এর উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহন করেছে। এ সব কর্মসূচির মধে রয়েছে পূর্জা-অর্চনা ও গীতা পাঠ, শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ, প্রার্থনা, ভোজন কীর্তন ও প্রসাদ বিতরণ প্রভূতি।