পার্বতীপুর ১শ' ৩৫ বছরের পুরনো রেলওয়ে জংশনে সমস্যা বিদ্যমান

দিনাজপুরের খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ও রেলওয়ে জংশন খ্যাত উপজেলা পার্বতীপুর। এই উপজেলায় রয়েছে বৃহৎ রেলওয়ে জংশন। মূলত পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনের জন্য খ্যাত। ১শ' ৩৫ বছরের পুরনো এই রেলওয়ে জংশনটিতে তেমন কোন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। পুরনো
এই রেলওয়ে জংশনটি জোড়াতালি দিয়ে সংস্কারের মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই জংশনটি আধুনিকায়নের দাবী জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী।
জানা গেছে,দেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ রেলওয়ে জংশন পার্বতীপুর। চার লাইনের সংযোগস্হল এই রেলওয়ে জংশন হয়ে প্রায় অর্ধ শত ট্রেনের মাধ্যমে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী দেশের বিভিন্নস্হানে যাতায়াত করে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ এই রেলওয়ে জংশনটি ১৮৮৯ ইং সালে স্হাপিত হলেও আজও আধুনিকতার তেমন কোন ছোঁয়া এখানে লাগেনি। যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের মাধ্যমে এখানে বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও সে তুলনায় জংশনের শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে না।
আজও এখানে বিদ্যমান নানাবিধ সমস্যা। এক সময় এখানে ঠান্ডা এবং গরম পানি সরবরাহের ব্যবস্হা ছিল। কিন্তু এখন এখানে পানীয়জলের চরম সংকট। জংশনের ছাদ ও সেড মেরামত করা হলেও বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে যায় প্লাটফর্মগুলো। জংশনের ২ নম্বর প্লাটফর্মে এক পাশে সম্প্রতি একটি ছোট আকারের গণশৌচাগার নির্মিত হলেও যা মুলত অকার্যকর এবং প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। যে কারণে জংশনে অবস্থানরত ট্রেন যাত্রীদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। জংশনের ১ নম্বর প্লাটফর্মে ওয়েটিং রুম থাকলেও সেগুলো বেশীর ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। জংশনে নির্ধারিত কোন অনুসন্ধান কেন্দ্র না থাকায় ট্রেন যাত্রীদের সহজে ট্রেন সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহে বেগ পেতে হয়। জংশনের প্লাটফর্মগুলোতে রয়েছে হকারদের উপদ্রব। এটা অবশ্য দীর্ঘদিনের সমস্যা। এদের বেশীর ভাগই খাদ্য সামগ্রী বিক্রেতা। জংশন এলাকায় ট্রেন ছাড়া অন্য কোন যানবাহন প্রবেশ নিষেধ থাকলেও লক্ষ্য করা গেছে এক শ্রেণির মানুষ আইনের কোন তোয়াক্কা না করে রীতিমতো মোটরসাইকেল নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছে এবং পাকিং করছে। এ ছাড়াও জংশন এলাকায় কিছু অবাঞ্চিত লোকের অবাধ বিচরণ রয়েছে। এরা মূলত সুযোগ সন্ধানী। যোগাযোগ করা হলে পার্বতীপুর রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফকরুল ইসলাম বলেন,পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জংশনে স্হাপিত সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সর্বক্ষনিক জংশনের সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। জংশনে ও ট্রেনে যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেলওয়ে পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। তিনি আরও বলেন,নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাত্রীদের ট্রেন ভ্রমণের জন্য রেলওয়ে পুলিশ সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।
পার্বতীপুরে রয়েছে মধ্যপাড়া পাথর খনি,বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি,তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র,শহীদ মাহবুব সেনানিবাস,ল্যাম্প হাসপাতাল,রেলওয়ে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা,ডিজেল কারখানা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্হাপনা। এ ছাড়াও রয়েছে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিস প্রতিষ্ঠান। সেই সাথে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রী সাধারণ এই জংশন হয়ে ট্রেন যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই রেলওয়ে জংশনে আন্তঃনগর ট্রেনের বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা অন্যসব স্হানের তুলনায় কম। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। জংশন সংলগ্ন রেলওয়ে পার্কটির অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। নামের সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। পার্কটি সংস্থার করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হলে এলাকার পরিবেশ আরও ভালো হবে।
পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনটি আধুনিকায়নের সকল সুবিধা এখানে রয়েছে। রেলওয়ে জংশন সংলগ্ন শহরের অধিকাংশ ভূমি রেলওয়ের। সেই সুবাদে এখানে গড়ে উঠতে পারে একটি সৌন্দর্য মণ্ডিত আধুনিক মানের রেলওয়ে জংশন।
দেশের বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ এই রেলওয়ে জংশনটিকে একটি আধুনিক মানের রেলওয়ে জংশনে রুপান্তরিত করার দীর্ঘদিনের দাবী এলাকাবাসীর।