logo
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৩:১১
ইসরায়েলি হামলায় বাস্তুচ্যুত ১০ লাখ মানুষ: লেবাননের প্রধানমন্ত্রী
অনলাইন ডেস্ক

ইসরায়েলি হামলায় বাস্তুচ্যুত ১০ লাখ মানুষ: লেবাননের প্রধানমন্ত্রী

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেছেন, ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলা লেবাননজুড়ে ইতিমধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘১০ লাখ মানুষ কয়েক দিনের মধ্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছে, যা এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতির ঘটনা হতে পারে।’

সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী বৈরুতে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ হত্যার দুই দিন পর রোববারেও বিমান হামলায় ১২৫ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে হিজবুল্লাহও ইসরায়েলের  উত্তরাঞ্চল লক্ষ্য করে আরও রকেট ছুঁড়েছে।

ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইয়েমেনেও ‘বড় ধরনের’ বিমান হামলা চালিয়েছে। ইরান সমর্থিত হুতিদের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।  রোববার হেজবুল্লাহ তাদের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার আলী কারাকি এবং একজন সিনিয়র ধর্মীয় নেতা শেখ নাবিল কাউক ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে।

ইসরায়েলের সামরিক চিফ অফ স্টাফ হারজি হালেভি বলেছেন, ‘হিজবুল্লাহকে আমাদের কঠোরভাবে আঘাত করতে হবে।’

গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভোরে লেবাননের মধ্য বৈরুতের একটি এলকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের তিন সদস্য নিহত হয়েছেন। 

বিবৃতিতে জানানো হয়, ইসরায়েলি হামলায় নিহতরা হলেন পিএফএলপির সামরিক নিরাপত্তা প্রধান মোহাম্মদ আবদেল-আল, সামরিক কমান্ডার ইমাদ ওদেহ এবং যোদ্ধা আবদেল রহমান আবদেল-আল।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেছেন, অব্যাহত বিমান হামলা বৈরুত ও দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকাসহ দেশের অন্যান্য অংশ থেকে মানুষজনকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। 

লেবানন থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তার দেওয়ার ক্ষেত্রে সংগ্রাম করছে। আশ্রয় শিবির ও হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে।

২৫ বছর বয়সী আয়া আয়ুব বিবিসিকে বলেছেন, তাদের ছয় সদস্যের পরিবারের সঙ্গে তাকে বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় তাহউিইটেট আল ঘাদির শহরতলীর বাড়ি ছাড়তে হয়েছে।  কারণ সেখানে অবস্থান করাটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল। তাদের বাড়ির চারপাশের সব ভবন ইসরায়েলি বিমান হামলায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি বৈরুতের একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে আরও ১৬ জনের সাথে অবস্থান করছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুক্রবার বাড়ি ছেড়েছি। কিন্তু যাওয়ার কোনও জায়গা ছিল না। রাত ২টা পর্যন্ত রাস্তায় ছিলাম। এরপর কিছু লোক আমাদের একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। আমরা রাতের বেলায় মোমবাতি জ্বালিয়ে থাকি। খাবার ও পানি বাইরে থেকে আনতে হয়।’

৩৪ বছর বয়সী সাংবাদিক সারা তোহমাজ বিবিসিকে বলেছেন, তাকে গত শুক্রবার বৈরুতের কাছে তার বাড়ি থেকে তার মা ও দুই সহোদরসহ বেরিয়ে আসতে হয়েছে। গাড়িতে করে সিরিয়া হয়ে জর্ডানে এসেছেন তিনি। জর্ডানে পৌঁছাতে তাদের প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় লেগেছে।

তোহমাজ বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা যথেষ্ট ভাগ্যবান যে জর্ডানে আমাদের থাকার মতো জায়গা আছে। সেখানে মায়ের দিকে আত্মীয়রা আছে। পরে কী হবে আমরা জানি না এবং আবার কখন ফিরতে পারবো তাও জানি না।’

গত বছরের অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত চলছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালানোর একদিন পরই হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে ইসরায়েলি অবস্থানে গুলি চালায়। এরপর থেকে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাসহ শত শত মানুষ মারা গেছে এবং উভয়পক্ষে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

রোববার ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা ইয়েমেনে হুতিদের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। সেখান বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও রাস ইসা ও হুদাইদায় বন্দরে হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েল বলছে, হুতিরা সম্প্রতি যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে তার পাল্টা জবাব হিসেবে ইসরায়েলি বিমান হুতিদের সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। একই সঙ্গে ইরানি অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থাগুলো ধ্বংস করার জন্যে।  

ইয়েমেনের বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণকারী শিয়া গোষ্ঠী হুতিরা ইসরায়েলি হামলাকে ‘নিষ্ঠুর আগ্রাসন’ হিসেবে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করে জানিয়েছে, হামলায় চারজন নিহত ও ৩৩ জন আহত হয়েছেন। সবমিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কা করছেন অনেকে।

হিজবুল্লাহ বা ইরানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের বিষয়ে ইসরায়েলকে সতর্ক করে ওয়াশিংটন বলেছে, বড় ধরনের সংঘাত হলে উত্তর ইসরায়েলে যেসব মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে তাদের ঘরে ফেরা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।